অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বৈঠকে আলোচনায় যা ছিল
নিউজ ডেস্ক :
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথমদিনে অন্তত নয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারে আরও ছাত্র-প্রতিনিধি যুক্ত করা, রাজনৈতিক মামলা বন্ধ, আইসিটি সংশ্লিষ্ট আইনের নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল, আর্থিক খাতের শীর্ষ পদে পরিবর্তন, আন্দোলনকালীন হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার, বিচার বিভাগ চালু এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়ার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সভাপতিত্বে তার সাময়িক বাসভবন ‘যমুনা’য় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আহত-নিহতদের প্রতি সমবেদনা
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ড. ইউনূস আগামীকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রংপুরে যাবেন।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় এনে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন, যারা আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ব্যয় নির্বাহে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা সরকার দেবে। চিকিৎসাধীন যাদের বিষয়ে সরকার তথ্য জানে না তাদের তথ্যও সরকারকে জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি’, বলেন রিজওয়ানা।
আইনশৃঙ্খলা
বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হয়তো একদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে না, তবে যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইজিপিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষ এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সমস্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, আমাদের সকলকে পুলিশের পাশে দাঁড়াতে হবে। একটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেলে কাজ করতে পারবে না, এটা স্বাভাবিক। আমাদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, আশা করি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
‘গণহত্যার’ দৃষ্টান্তমূলক বিচার
আন্দোলনে 'গণহত্যার' বিচার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'এই হত্যার বিচার অবশ্যই স্বচ্ছভাবে করব, এমনভাবে বিচার নিশ্চিত করা হবে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।' তিনি বলেন,'প্রতিটি গুলির বিচার চাওয়া হবে।
রাজনৈতিক মামলা
আন্দোলন চলাকালে অনেক হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, শুধু এই আন্দোলন নয়, এর আগেও অনেক হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। হয়রানিমূলক মামলাগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায় চিন্তা করছে সরকার।
আইসিটি সংক্রান্ত আইন সংশোধন
তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত আইনগুলোর মধ্যে থাকা বিতর্কিত ধারা বাতিলেরও চিন্তা করছে সরকার।
রিজওয়ানা বলেন, আইসিটি আইন, ডিজিটাল আইনের পর সাইবার সিকিউরিটি আইনের মামলায় আপনারাও (সাংবাদিক) ভুক্তভোগী। আইসিটি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন না থাকলেও এসব আইনে অনেকে বিচারাধীন বা জেলে আছেন। হয়রানিমূলক মামলার মধ্যে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে এসব আইনে কতটুকু পরিবর্তন করলে মতপ্রকাশে স্বাধীনতায় বা বিরোধী মত প্রকাশে বাধা থাকবে না, ততটুকু বাতিলের বিবেচনা করা হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরই এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত হবে' জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, 'শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার বিষয়টিতে নিরাপত্তা জড়িত। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দ্রুতই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হবে।
সরকারে আরও ছাত্র প্রতিনিধি
সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত থাকার কথাও জানান রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সম্পৃক্ত থাকবেন, সেটার কাঠামো কী হবে, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
আর্থিক খাত
বৈঠকে আর্থিক খাত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, আর্থিক খাতগুলোকে শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। এর জন্য নেতৃস্থানীয় জায়গায় পরিবর্তন আনার কাজ চলছে। ব্যবসায়ীরা যাতে পুরোদমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ
এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কী ধরনের সংস্কার চাওয়া হচ্ছে, সেগুলো করতে কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত হওয়ার আগে মেয়াদ ঘোষণা করা সম্ভব নয়।
‘‘আর সংস্কার যদি না চাওয়া হয় তাহলে ভিন্ন কথা। এখনই মেয়াদ মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আমরা যেন গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করতে পারি সেই প্রস্তুতির জন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই প্রস্তুতি নিতে যেটুকু সময় দরকার আমরা সেটুকুই নেব। শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের পথেই আমাদের যাত্রা করতে হবে।’’
daily campus